সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের ভারত গমন : স্বরূপ সন্ধান : যৌক্তিকতা আর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে Part - ৫ [ বাংলাদেশ ভারত রিলেটেড প্রবন্ধ # ১১ ]


বাংলাদেশের পত্রিকা প্রথম আলোর রিপোট থেকে :

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের পরও অনেক পরিবার দেশান্তরি হয়েছে। গ্রাম ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯২ সালের পর থেকে সুতারবাড়ির চারটি, ডাক্তারবাড়ির ১০, মাঝের সিংবাড়ির ছয়, রাস কমল হাওলাদার বাড়ির সাত, লক্ষ্মীকান্ত হাওলাদার বাড়ির তিন, তীর্থবাস হাওলাদার বাড়ির সাত, পরেশ হাওলাদার বাড়ির সাত, তেলীবাড়ির তিন, রাধেশ্যাম সুতারবাড়ির তিন, মন্টু হাওলাদার বাড়ির এক এবং রাড়ি বাড়ির সব কটি পরিবারসহ গ্রামের ৭৫টি বাড়ির দুই শতাধিক পরিবার চলে গেছে। উপজেলার নলগোড়া, লেজপাতা ও চরগুমানী—এই তিনটি গ্রাম ছিল হিন্দু-অধ্যুষিত। স্বাধীনতার সময় এই গ্রামে চার শতাধিক বাড়ি ছিল। এই গ্রামগুলোর ১৭২টি বাড়ির কয়েক শ পরিবার চলে গেছে। বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের মুলাইপত্তন গ্রামে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এক হাজারের বেশি হিন্দু পরিবার ছিল। বর্তমানে সেখানে আছে ৪৪টি পরিবার। লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে চারটি গ্রাম ছিল হিন্দু-অধ্যুষিত। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এই ইউনিয়নে চার হাজার ৬০০ হিন্দু ভোট ছিল। ইউনিয়নের অন্নদাপ্রসাদ গ্রামের যাত্রামণি লস্কর বলেন, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদের ঘটনা ও ২০০১ সালে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে গ্রামগুলোর অধিকাংশ হিন্দু পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে যায়। স্থানীয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে বলা হচ্ছে, বর্তমানে ইউনয়নে হিন্দু ভোটারের সংখ্যা ৬০০। 
:
গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জ জেলায় আওয়ামী লীগের একক প্রাধান্য। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, দলটির সঙ্গে সংখ্যালঘুদের সুসম্পর্ক আছে। স্বাধীনতার পর জেলায় সাম্প্রদায়িক সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও উল্লেখ করার মতো নয়। তার পরও এই জেলা থেকে নিয়মিতভাবে হিন্দুরা চলে যাচ্ছে। ২০০১ সালে এই জেলায় হিন্দু ছিল তিন লাখ ৭১ হাজার ৬২৯ জন। ১০ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৫৩ হাজার ৭৯৪ জনে।
:
জেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবীণ সাংবাদিক প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘শত্রু সম্পত্তির’ নির্যাতন চেপে আছে প্রায় ৫০ বছর ধরে। এরপর বড় আঘাত আসে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার মধ্য দিয়ে। এসব ব্যাপারে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেছেন, উপযুক্ত হওয়ার পরও জেলা আওয়ামী লীগে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের পদ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা পায় না। সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সংসদে হিন্দু শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ পদ সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস)। ছোট গোপালগঞ্জ শহরে বড় দলের নেতারা সংখ্যালঘুদের বাড়ি-সম্পত্তি দখল করে দিব্যি বসবাস করছেন। এসব দৃশ্য দেখে নিরাপদ বোধ করে না হিন্দুরা। গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি সম্পর্কে কাজল দেবনাথের মন্তব্য, ‘প্রদীপের নিচে অন্ধকার।’ উদ্যোগ নেই: দেশত্যাগ বন্ধের উদ্যোগ এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোপালগঞ্জ জেলার একজন চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘নিরাপদে জমি-বাড়ি যেন বিক্রি করতে পারে, সে ব্যাপারে কিছুটা সাহায্য করার চেষ্টা করি। থেকে যেতে বলতে পারি না।’ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদ্যাপন পরিষদ মাঝেমধ্যে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সভা ও সেমিনার করে। এসব সভা-সেমিনারে দেশ না ছাড়ার, নির্যাতনের প্রতিবাদ করার কথা বলা হয়। কাজল দেবনাথের দাবি, এতে কাজ হচ্ছে।
:
হ্যা এটা সত্য পাকিস্তান আমল থেকে শত্রু সম্পত্তি আইনে মার খেয়েছেন সংখ্যালঘুরা। সেই আইন সংশোধন করল বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটা বড় উপহার দিয়েছেন দেশের সংখ্যালঘুদের। পাকিস্তান আমল থেকে গত ৬০ বছর ধরে শত্রু সম্পত্তি আইনের ফাঁসে বেদখল হয়ে যাওয়া হিন্দুদের সম্পত্তি প্রকৃত মালিক বা উত্তরাধিকারীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি বিল সম্প্রতি সংসদে পাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। বিলের নাম ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) বিল ২০১১’। [সূত্র : আনন্দবাজার ১৫/১২/১১]




লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন