মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

৭১’র মুক্তিযুদ্ধের স্বরূপ সন্ধান : ইন্দিরাগান্ধী, ভারতরাষ্ট্র আর সোভিয়েত সহযোগিতার অকথিত কথামালা পর্ব # ৩ [ বাংলাদেশ ভারত রিলেটেড প্রবন্ধ # ১৮]




জাতিসংঘের মহাসচিবের বাংলাদেশ সংক্রান্ত ভূমিকায় ইন্দিরা গান্ধী বলেন, তার যা করা উচিৎ ছিল তিনি তা করেননি। যা খুবই দুঃখজনক। ইন্দিরা গান্ধীর এসব কূটনৈতিক কর্মকান্ডের ফলে ১৭ আগষ্ট জেনেভায় আন্তর্জাতিক আইন সমিতির পক্ষ থেকে পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে প্রেরিত তার বার্তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি দাবী করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন।

:
৩০ আগষ্ট ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বশান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্রকে সাক্ষাতকার দেন। তাতে ইন্দিরা গান্ধী সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের মধ্যে সম্পাদিত ভারতের ভূমিকার যৌক্তিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। এভাবে ইন্দিরা গান্ধী যুদ্ধকালীন সময় বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। 
:
বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য ভারতের বিরুদ্ধেও পাকিস্তান যুদ্ধ ঘোষণা করলে সেখানেও এক হয়ে পকিস্তানের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধের নির্দেশ দেন। বাংলাদেশের লাখ লাখ শরণার্থীকে সেবাযত্ন করায় ইন্দিরা গান্ধীর এ কাজকে যীশু খৃষ্টের কাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন নোবেলজয়ী মাদার তেরেসা। ‘তারা সবাই ঈশ্বরের সন্তান’ শীর্ষক একটি বইয়ে তেরেসা এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। 
:
ভারতের সেসময়কার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫ জন উদ্বাস্ত্তকে আশ্রয় দেন। তাদের থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য সাহায্য করেন। পরম মমতায় সেদিন ইন্দিরা গান্ধী শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ান ও আশ্রিতদের সহায়তার জন্য ভারতবাসীকে অনুরোধ করেন। শুধু উদ্বাস্ত্ত বা শরণার্থীদের আশ্রয়ই নয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী হিসেবে প্রতিবাদী অথচ নিরস্ত্র বাঙালিকে সাহস জোগান তিনি। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, যুবকদের গেরিলা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ভারতে। এর ফলেই অনেকটা ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হয় বাংলাদেশীদের। মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে একের পর এক গেরিলা যুদ্ধে পরাস্ত করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনিকে।
:
মুক্তিযুদ্ধ চলার সময়েই, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, “পূর্ব বাংলায় যা ঘটেছে, তাতে ভারত সরকার নীরব থাকবে না।” পরে ১৭ মে তিনি পশ্চিমবঙ্গ আসেন। কারণ সেখানেই সবচেয়ে বেশি শরণার্থী আশ্রয় নেয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, শরণার্থী বিষয়ে কেন্দ্র তাদের পাশে আছে ও থাকবে। এর আগেই ৩০ এপ্রিল ’৭১ ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করতে ভারতিয় সেনাবাহিনিকে দায়িত্ব দেন। ৯ মে তাদের হাতে দেয়া হয় হয় মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করতে আগ্রহী বাংলাদেশের তরুণদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেয়ার দায়িত্ব। এছাড়াও, শাসক পাকিস্তানিদের বাংলাদেশে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন আদায়ে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সেসময় বিভিন্ন দেশ সফরও করেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সহানুভূতি ও সমর্থন আদায়েও সক্ষম হয়।
:
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য একটি ট্রান্সমিটার বরাদ্দ করেন ইন্দিরা গান্ধী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুর মুক্তি এবং সামরিক সাহায্য বন্ধের বিষয়ে অক্ষমতা জানালে ইন্দিরা গান্ধী তাকে বলেন, “ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সাহয়তা বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তর নেই।” ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর কলকাতায় এক জনসভায় ইন্দিরা গান্ধী ভাষণ দেয়ার সময় পাকিস্তানি বাহিনি ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতেও আক্রমণ করে। তিনি সেদিনই তার মন্ত্রিসভার ভাষণে বলেন, “আমি এ মুহূর্তে আমাদের দেশের এবং জনগণের গুরুতর বিপদের কথা উল্লেখ করে আপনাদের উদ্দেশে বলছি, কয়েক ঘণ্টা আগে পাকিস্তান আমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছে। পাকিস্তানি বাহিনি হঠাৎ করে আমাদের এয়ার ফিল্ড, অমৃতসার, পাঠান কোর্ট, শ্রীনগর, অবন্তীপুর, উতরলেট এবং আগ্রায় আঘাত হেনেছে। এতদিন ধরে বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিল, তা ভারতের বিরুদ্ধে পরিণত হয়েছে।’’



লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন