সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

৭১’র মুক্তিযুদ্ধের স্বরূপ সন্ধান : ইন্দিরাগান্ধী, ভারতরাষ্ট্র আর সোভিয়েত সহযোগিতার অকথিত কথামালা ১০ পর্বে বিভক্ত প্রবন্ধটির পর্ব # ১ [ বাংলাদেশ ভারত রিলেটেড প্রবন্ধ # ১৬]


ভূমিকা 

হাজার বছরের চির পরাধীন এবং অবশেষে একাত্তরে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের মহান বিষয়ের ৪৪-তম দিন পালনে আমরা সবাই উদগ্রিব। স্বাধীনতা অর্জনে ত্রিশ লাখ শহীদ, অগণিত মা-বোনের ইজ্জত এবং জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের নানাবিধ খেতাব ও কমবেশী সুযোগ সুবিধাও আমরা দেয়ার চেষ্টা করছি স্বল্প সম্পদের এদেশে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা এখন বংশানুক্রমে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং নাতিপুতিদের দেয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। ৭-জন বীর শ্রেষ্ঠর সম্মানে এদেশের মানুষ এখনো আপ্লুত হয়। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে আমরা জাতীয় স্মৃতিসৌধও নির্মাণ করেছি। শোনা যাচ্ছে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিদেশীদেরও সরকার সম্মানিত করবেন এবং সে লক্ষে একটি তালিকাও নাকি তৈরী হচ্ছে। যা সবই প্রশংসার দাবী রাখে।
:
কিন্তু একটি ব্যাপার এদেশের অসাম্প্রদায়িক ‘কৃতজ্ঞ’ বাঙালিকে ‘দহন’ করছে প্রতিনিয়ত সেই একাত্তর থেকেই। আর তা হচ্ছে, একাত্তরে আমাদের চরম বিপদের সময় ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যেভাবে প্রত্যক্ষভাবে আমাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল, তার স্মরণে কিংবা তারা কিভাবে কতটুকু আমাদের সহায়তা করেছিল তা সুষ্পষ্টভাবে সকল জাতির মাঝে কখনো ব্যাপক প্রচার না হওয়া। দীর্ঘদিন এদেশের মানুষ নানা প্রচার মাধ্যমে শুনে এসেছে, যুদ্ধের পর ভারত নাকি এদেশের অনেক সম্পদ ‘পাচার’ করে তাদের দেশে নিয়ে গেছে। এর সত্যা-সত্যও প্রকাশিত হওয়া দরকার ৪৩-তম এ বিজয়ের প্রাক্কালে এ জাতির সামনেই।
:
আমরা যারা নিজ চোখে একাত্তর দেখেছি তারা কমবেশী জানি, পাকিস্তানীদের ভয়ে প্রায় কোটি শরণার্থী বাংলাদেশের ৩-দিকের বর্ডার দিয়ে ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের দেয়া হয়েছিল আশ্রয়, খাদ্য, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র। কত মানুষের জন্যে ভারতের কত আশ্রয় কেন্দ্র ছিল সেখানে তার হিসেব কি আমরা কখনো করেছি? সরবরাহকৃত খাদ্য, ক্যাম্প আর অস্ত্রের পরিমাণ কি ছিল? এ ক্ষেত্রে ভারতের জনগণ কি ত্যাগ স্বীকার করেছিল এ জাতির স্বাধীনতায় বা ট্যাক্স দিয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্যে? স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রটিও কি ভারত সরকার বাংলাদেশকে দান করেছিল বিনে পয়সায়? তার মূল্য ছিল কত? এ ছাড়া যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের ডাকটিকেট, পোস্টার, মুদ্রা ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছিল ভারত থেকেই। সরকারি দফতরও ছিল সেখানে। সেগুলো কিভাবে হয়েছিল?
:
বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জনগণ ও সরকার যে সমর্থন-সহযোগিতা করেছেন, তা বিশ্বের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। প্রায় ১ কোটি শরণার্থীর ভারতের মাটিতে আশ্রয় দেয়া এবং তাদের খাবার, ওষুধের ব্যবস্থা করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকারকে সার্বিক সহায়তা দেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে সফল করার লক্ষ্যে সামরিক অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ভারত সরকারের অবদান আমরা চিরদিন কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করব। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিসমাপ্তিতে বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান তৎকালীন ভারতিয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর। তিনি দেশের অভ্যন্তরে জনমতকে বাংলাদেশের পক্ষে ধরে রাখতে ভূমিকা রেখেছেন। একই সঙ্গে বিশ্বের জনমতকে বাংলাদেশের পক্ষে আনার জন্য বিশেষ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন।
:
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে ১৯৭১ এর বাংলাদেশ স্বাধিনতা যুদ্ধে ভারত ২৫০,০০০ সেনা, মুক্তিবাহিনি ১০০,০০০ জন অংশ গ্রহণ করে। প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয় ভারতের ১,৪২৬ জন সৈনিক, ৩,৬১১ জন আহত। আনুষ্ঠানিক ১,৫২৫ সাধারণ, ৪,০৬১ জন আহত সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালে ঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করে। যুদ্ধ শুরু হলে গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে মুক্তিবাহিনি সারাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনিকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। 
:
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সাহায্য লাভ করে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে যখন স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র তখন পাকিস্তান পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরিভাবে জড়িয়ে পড়ে। ১৬ই ডিসেম্বর ‘৭১ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। 



লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন