মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ভাষাবিদ পাণিনি : জীবন, গবেষণা ও মৃত্যু বিষয়ক কথামালা ৪ পর্বের লেখার পর্ব # ১ ভারত রিলেটেড প্রবন্ধ # ২৮


:
পাণিনি বিখ্যাত ব্যাকরণবিদ, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যভাগে লাহোর /পেশোয়ার অঞ্চলে শালাতুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অষ্টাধ্যায়ী নামে পরিচিত ব্যাকরণ গ্রন্থে তিনি প্রায় চার হাজার ব্যাকরণ সূত্র লিপিবদ্ধ করেন। পাশ্চাত্য পণ্ডিতরা ও পাণিনির মনীষা ও জ্ঞানের বিশেষ প্রশংসা করেন। তার মৃত্যু হয়েছিল ভাষার সূত্র আবিস্কার করতে গিয়ে। কিভাবে? চলুন দেখে পাণিনি কে ছিলেন?
:
পাণিনি (সংস্কৃত: সংস্কৃত: पाणिनि, আইপিএ: [pɑːɳin̪i], পারিবারিক নাম, অর্থ "পাণির বংশধর") ছিলেন একজন প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ। তিনি খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে গান্ধার রাজ্যের পুষ্কলাবতী নগরীতে বিদ্যমান ছিলেন।
:
যতদূর জানা গেছে পাণিনি পাকিস্তান এর রাওয়ালপিন্ডি অঞ্চলের আটকের নিকট শালাতুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি দাক্ষীর পুত্র। পাণিনির যুগ বা কাল নিয়ে কোন নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় নি। ড. আহম্মদ শরীফের মতে তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দে ছিলেন। পাশ্চাত্যের গো সু স্টুকারের মতে তাঁর কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দী। জার্মান পণ্ডিত ম্যাক্সমূলার এবং অয়েবার মনে করেন পাণিনি খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দে জীবিত ছিলেন। কথাসরিৎসাগর অনুসারে পাণিনি বর্ষ নামক আচার্যের নিকট থেকে ব্যাকরণ শিক্ষা গ্রহণ করেন। ইন্দ্রদত্ত এবং ব্যাড়ী ছিলেন তাঁর সামসময়িক সহপাঠী।
:
তিনি তাঁর অষ্টাধ্যায়ী (अष्टाध्यायी Aṣṭādhyāyī, অর্থাৎ "আট অধ্যায়") নামক সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থের জন্য বিখ্যাত। এই গ্রন্থে তিনি সংস্কৃত রূপমূলতত্ত্বের ৩,৯৫৯টি নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করেন। এই গ্রন্থটি বৈদিক ধর্মের প্রামাণ্য সহায়ক গ্রন্থ [[বেদাঙ্গ]|বেদাঙ্গের] ব্যাকরণ শাখার মূল গ্রন্থ। এই গ্রন্থের অধ্যায় সংখ্যা ৮ এবং সূত্রসংখ্যা ৩৮৬৩টি। গ্রন্থটি অষ্ট অধ্যায়ে বিভক্ত বলে এর নাম অষ্টাধ্যায়ী। প্রতি অধ্যায়ে চারটি পাদ বা চরণ আছে। এই গ্রন্থে সন্ধি, সুবন্ত, কৃদন্ত, উণাদি, আখ্যাত, নিপাত, উপসংখ্যান, স্বরবিধি, শিক্ষা, তদ্ধিত প্রভৃতি ব্যাকরণের সমগ্র বিষয় স্থান পেয়েছে। অষ্টাধ্যায়ী সংস্কৃত ভাষার প্রাচীনতম ব্যাকরণগুলির অন্যতম। যদিও পাণিনি উনাদিসূত্র, ধাতুপাঠ, গণপাঠ প্রভৃতি তাঁর পূর্বসূরিদের কয়েকটি ব্যাকরণগ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন।[২] পাণিনির ব্যাকরণ বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান ও সৃষ্টিশীল ভাষাবিজ্ঞানের প্রাচীনতম গ্রন্থ। নিরুক্ত, নিঘণ্টু ও প্রতিশাক্য গ্রন্থগুলির সঙ্গে পাণিনির ব্যাকরণ ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাসের সূচনা ঘটায়। পাণিনির জ্ঞানগর্ভ ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাকরণ তত্ত্ব বৈদিক সংস্কৃতের অন্তকাল ও ধ্রুপদি সংস্কৃতের সূচনাকালের সন্ধিক্ষণ রূপে পরিগণিত হয়।
:
নানা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে পাণিনি খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৯ম থেকে খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৪র্থ শতাব্দীর মধ্যে কোন এক সময় জীবিত ছিলেন। তবে গবেষকরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন যে, পাণিনির জীবনকাল খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষে বা খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৭ম শতাব্দীর প্রথম দিকে ছিল। পাণিনির জন্মস্থান নিয়েও একই রকম বিভ্রান্তি থাকলেও গবেষকরা মোটামুটি ভাবে একমত যে তিনি, গান্ধার প্রদেশের (বর্তমান- পাকিস্তান) শালাতুর (বর্তমান- লাহোর) গ্রামে জন্মেছিলেন। পাণিনির জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে মগধের রাজধানী পাটলীপুত্রে। তাই কিছু পণ্ডিতের মতে পাণিনির পূর্বপুরুষেরা শালাতুর গ্রামের হলেও পাণিনির জন্ম হয়েছিল, পাটলীপুত্রে।

পাণিনি ছিলেন একজন শিষ্ট। শিষ্টেরা ছিলেন এক ধরণের ব্রাহ্মণ। শাস্ত্রের ওপর ছিল তাঁদের অসামান্য অধিকার। পার্থিব সুখ, স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন দিয়ে তাঁরা একটি বিশেষ অঞ্চলে বসবাস করতেন(গবেষণা? ) । বাস স্থানের উত্তরে ছিল হিমালয়, দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বতমালা, পূর্বে বঙ্গভূমি এবং পশ্চিমে আরাবল্লী পাহাড়ের রেখা। পাণিনি ছিলেন, পণি নামে এক ঋষির সন্তান। এবার পণি বা পাণিন্‌ একটি গোত্র নাম। সংস্কৃত সাহিত্যে পণি নামে একটি গোষ্ঠীর নাম পাওয়া যায়। পণি, ফিনিকিয়, পিউনিক এবং ফিনিসীয় গোষ্ঠীর লোকেরা একসময় ভারত মহাসাগরের উপকূলে বসবাস করতেন। পাণিনির বাবা ছিলেন ফিনিকিয় পণি গোষ্ঠীর মানুষ। তাঁর নাম ছিল, শলঙ্ক। তাই পাণিনির আর এক নাম ছিল শালাঙ্কি। পাণিনির মা ছিলেন ডেসিয়ান। দক্ষ জাতির মহিলা। তাই তাঁর নাম দাক্ষি। তিনি রূপে গুণে অতুলনীয়া ছিলেন। পাণিনির আর এক নাম তাই দাক্ষিপুত্র। পাণিনির ভক্ত পতঞ্জলি পাণিনি কে এই নামে বিখ্যাত করেছেন।


লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ



:

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন