মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ছিটমহল সমস্যার সমাধান। দু-দেশের লাখো মানুষের কান্নার কি অবসান হচ্ছে? : ৩ [ ভারত বাংলাদেশ রিলেটেড প্রবন্ধ # ৩৫ ]


১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নূন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ছিটমহল সমস্যার সমাধানে অগ্রসর হন। তবে সমস্যার কোন বাস্তব সমাধান হয়নি। নূন ও নেহরু বেরুবাড়ী ছিটমহল হস্তান্তরের একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষর করেন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।



ছিটমহলের বাংলাদেশ পর্ব তথা ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি:



বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধী একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নামে অধিক পরিচিত। ছিটমহল সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ও ভারত যথাশীঘ্রসম্ভব ছিটমহল বিনিময় করতে সম্মত হয়। এচুক্তি অনুযায়ী বেরুবাড়ীর বিনিময়ে বাংলাদেশ দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার সাথে মুল ভূখণ্ড সংযোগের নিমিত্তে তিন বিঘাকরিডোর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে পাবে। বাংলাদেশ বেরুবাড়ী দিয়ে দিলেও ভারত তার বিনিময়ে তাৎক্ষণিকভাবে করিডোরটি দিতে পারেনি। কথা ছিল উভয় দেশই নিজ পার্লামেন্টে চুক্তি অনুমোদন করবে। বাংলাদেশ অনুমোদন করলেও ভারত তা নানা কারণে করাতে পারেনি। ১৯৯০ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট তিন বিঘা করিডোরের অনুমতি দেয় ভারত সরকারকে।
:
লালমনিরহাট জেলাধীন পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা। ১৯৮৫ সালের পর থেকে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল পাটগ্রাম উপজেলার একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়ন দহগ্রাম ইউনিয়নহিসেবে পরিগণিত হয় এবং ১৯৮৯ সালের ১৯ আগস্ট এখানে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্বোধন হয়। পাটগ্রাম উপজেলা সদর হতে এর দূরত্ব ১০ কিমি। করিডোরের দৈর্ঘ্য ১৭৮.৮৫ মিটার। বেসরকারি মতে এখানকার জনসংখ্যা ১৫ হাজার। ১৯৯২ সালের ২৬ জুন তিন বিঘা করিডোর দৈনিক দিনের বেলা ১ঘন্টা পরপর মোট ৬ ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে খুলে দেয়া হয়। ২০০১ সালের ২৭ এপ্রিল থেকে তা দৈনিক সকাল ৭:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৭:৩০ পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার জন্য উন্মুক্ত হয়।

:
সর্বশেষ মনমোহন-হাসিনা সিমান্ত চুক্তি



গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ এ স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে এটি ভারত ২৪ ঘণ্টার জন্য খুলে দেয়। মনমোহনের বাংলাদেশ সফর শেষে তিস্তা ও ট্রানজিট নিয়ে যত হতাশার সৃষ্টি হোক না কেন, ছিটমহল নিয়ে যে কাজে অনেক অগ্রগতি হয়েছে তা সরকারের বিভিন্ন মুখপাত্রের কথায় জানা যায়। এটি মনমোহন সিংয়ের সফরের সবচেয়ে সফল দিক। ২০০০ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে সকল সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে যৌথ সীমান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী দুদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান বাস্তবায়ন কাজ করাও এই গ্রুপের অন্যতম দায়িত্ব। বিগত বছর নভেম্বরে এর চতুর্থ বৈঠক হয় নয়াদিল্লীতে এবং ১৯৭৪ সালের চুক্তির আলোকে ছিটমহলসহ সীমান্ত বিরোধ ও জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সুরাহার সিদ্ধান্ত নেয়। ছিটমহল বিনিময়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায় যে, যে ছিটমহল যে দেশের ভেতরে অবস্থিত সেমহলের বাসিন্দারা সেদেশের নাগরিকত্ব পাবে, তবে বসবাসকারীরা কোন দেশের নাগরিক হতে চান সে ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগও দেওয়া হবে। ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত যারা নেবেন তাদেরকে স্থানান্তরিত করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ও ভারত।
:
১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি এবং বর্তমান সরকারের আন্তরিকতার উপর ভিত্তি করে ছিটমহলবাসীরা সতুন করে আশায় বুক বাঁধে। এমনকি উভয় দেশের ছিটমহলবাসীরা বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটিনামে একটি কমিটিও গঠন করে। এই কমিটির ব্যানারে আন্দোলনও করছে তারা। মনমোহন সিংয়ের সাম্প্রতিক সফর নিয়ে তাদের ছিল বিরাট স্বপ্ন। এসফরে ছিটমহল সংক্রান্তে প্রটোকলও স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু অসহায় শিক্ষাবঞ্চিত মহলবাসীরা বিনিময়প্রটোকলএর পার্থক্য বুঝে না। একটি স্পষ্ট ঘোষণার প্রত্যাশায় ছিল বলে না পেয়ে ছিটমহলবাসীরা হতাশ হয়েছে। তাদেরকে আশ্বস্ত করা এখন সরকারের দায়িত্ব। ছিটমহল বড় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময়। যখন জাতীয়তাবাদী সার্বভৌম রাষ্ট্রের সীমান্ত অতিক্রম অনুমতি-সাপেক্ষ হয় ও পাসপোর্ট-ভিসা অবিচ্ছেদ্য উপাদান হয়ে দাঁড়ায় তখন ছিটমহলগুলি সম্পূর্ণরূপে নিজদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যে সমস্যা ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার মানবেতর সমস্যা।




এর পর জানতে চাইলে দেখুন পর্ব #

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন