মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

৭১’র মুক্তিযুদ্ধের স্বরূপ সন্ধান : ইন্দিরাগান্ধী, ভারতরাষ্ট্র আর সোভিয়েত সহযোগিতার অকথিত কথামালা পর্ব # ২ [ বাংলাদেশ ভারত রিলেটেড প্রবন্ধ # ১৭]



বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর রয়েছে অসামান্য অবদান। তিনি শুধু এক কোটি বাংলাদেশীকে আশ্রয় ও খাওয়া-পরার ব্যবস্থাই করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেন। আর বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছেন। এমনকি মার্কিন রক্তচক্ষুর বিপরীতে এক অনন্য অবস্থানও নেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারত মাতা ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশে জন্য যে কূটনৈতিক অবদান রেখেছেন তা অন্যান্য অবদানের চেয়েও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাংলাদেশের অনুকূলে বিশ্বের জনমত ও বিবেক জাগ্রত করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও দক্ষ কূটনীতিকদের বিশেষ দায়িত্ব দেন। এজন্য তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়কে ইন্দিরা গান্ধী বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করেন। ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত হিসেবে সিদ্ধার্থ শংকর রায় থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, জাপান, ও অস্ট্রেলিয়া সফর করে বাংলাদেশ সমস্যার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেন এবং বাঙালী শরণার্থীদের আগমন ও পাকিস্তান সরকারের বর্বরতার বিবরণ তুলে ধরেন।
:
১৯৭১ সালের ১৩ মে বেলগ্রেডের রাজধানী বুদাপেস্টে বিশ্বশান্তি কংগ্রেসের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। এ সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ পরিস্থিতি পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরেন। ৮০ টি দেশের ৭০০ প্রতিনিধির এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারত নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি বার্তা পাঠান। বার্তাটি সম্মেলনে পাঠ করা হয়। বার্তায় ইন্দিরা গান্ধী বলেন, প্রায় ২০ লাখ উদ্বাস্তু ভারতে চলে এসেছে। এতে ভারতের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ছে। উদ্বাস্তুরা যাতে নিরাপদে দেশে মর্যাদার সঙ্গে ফিরে যেতে পারে তেমন অবস্থা সৃষ্টির জন্য পাকিস্তানকে বাধ্য করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যাতে তাদের শাসন করতে পারেন, সে অবস্থা সৃষ্টির জন্য ভারত কাজ করছে। ইন্দিরা গান্ধী এই কাজে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্র গুলোর সহযোগিতা চান। 
:
২৩ মে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের কাছে এক কূটনৈতিক পত্রে বাংলাদেশ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন। পত্রে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সমস্যা শুধু ভারতের জন্য সমস্যা নয়, এ সমস্যায় বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হতে পারে বলেও মিসরের নেতাকে জানান টাইমস পত্রিকায় সাক্ষাতকার দিয়ে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে ইয়াহিয়া খানের নতুন পরিকল্পনা বাংলাদেশের অবস্থা আরও ভয়াবহ করে তুলবে। 
:
৮ আগষ্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান দের কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষা ও মুক্তির দাবী জানিয়ে পত্র দেন। পত্রে ইন্দিরা গান্ধী ইয়াহিয়া খান কর্তৃক প্রহসনমূলক বিচারের নামে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার চক্রান্ত তুলে ধরে তা প্রতিহত করার জন্য বিশ্বনেতাদের অনুরোধ করেন এবং ইয়াহিয়া খানের ওপর চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানান। 
:
১ আগষ্ট ইন্দিরা গান্ধী বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে অন্যান্য দেশের অনীহা সবচেয়ে দুঃখজনক। ১১ আগষ্ট ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বের ২৪ জন রাষ্ট্র প্রধানের কাছে বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষায় তাদের প্রভাব খাটানোর আবেদন করেন।
:


লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন