মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ সনের পশ্চিম বাংলার বাঙালি ভার্সাস বাংলাদেশের বাঙালি [ ভারত রিলেটেড প্রবন্ধ # ৩২ ]



এক সময় এক সুন্দর বাংলাদেশ ছিল বৃটিশ ভারতে কিন্তু ধর্মীয় কারণে অনেক দেশের মতো এ বাংলাদেশটিও বিভাজিত হয়। বাঙলা নামক দেশটিকে করা হয় টুকরো। প্রায় ৬৭ বছর আলাদা আমরা রাজনৈতিক-ধর্মীয় কারণে। ধর্ম কি মানুষের আচরণের খুব পরিবর্তন করে? তা না হলে ২-বাংলার বাঙালির মাঝে ক্রমান্বয়ে এতো প্রভেদ কেন সৃষ্টি হলো? ২০/২২ বার পশ্চিম বাংলা ভ্রমণ করেছি আমি, যতই দিন যাচ্ছে ততই বাংলার দুঅংশের সাথে প্রভেদ সুষ্পষ্টতর হচ্ছে আমার কাছে। যার কটি তুলে ধরতে চাই আমার ২ বাংলার ফেসবুক বন্ধুদের কাছে। [আলোচনার সুবিধের জন্যে বাংলাদেশের বাঙালিকে বা/বাঙালি আর পশ্চিম বাংলার বাঙালিকে ভা/বাঙালি হিসেবে সম্বোধন করলাম]
:
১। দুর্নীতি ২-বাংলায় কমবেশি দৃশ্যমান হলেও, বা/বাঙালির মাঝে ৯০% ব্যাপৃত এবং ভোগবাদ এখানে যে কোন ভাবে অর্থ কামানোকে হালাল করেছে কিন্তু ভা/বাঙালির মাঝে তা কিছুটা দৃশ্যমান হলেও ১০% এর বেশি নয়।

২। বা/বাঙালি ডাক্তারগণ অধিকাংশ অর্থের ধান্ধার ঘুরছে বিধায় অপচিকিৎসা, টেস্টের নামে ব্যবসা বেশ জমজমাট, কিন্তু ভা/বাঙালি ডাক্তারগণ এ ক্ষেত্রে এখনো রোগিকে মানবিক দৃষ্টিতেই দেখেন মনে হলো।
৩। বা/বাঙালি ট্রাফিক আইন মানতেই চায়না, রিক্সাওয়ালা, বাস ড্রাইভার সবাই আইন ভেঙে ঢাকার রাস্তাকে এ্কটা পাগলা গারদে পরিণত করেছে পক্ষান্তরে ভা/বাঙালির ৯৯% ট্রাফিক আইন মেনে চলে অনেকটা উন্নত দেশের মতই।
৪। বা/বাঙালির বাসে লঞ্চে বলতে গেলে ভাড়ার কোন চার্ট নেই, ইচ্ছেমত বাস-লঞ্চে ভাড়া আদায় হচ্ছে, যেমন বিশ্বরোড থেকে কালশি ২/৩ কিলোমিটার ভাড়াও ৩০/- টাকা সিটিংয়ের নামে, ভা/বাঙালির মাঝে এমন কোন সিটিং নামক চিটিং সার্ভিস নেই। পুরো কোলকাতা শহরের সর্বোচ্চ ভাড়া ১২ টাকা।
৫। বাংলাদেশের ট্যাক্সি-অটো মিটারে যেতে চায়না দ্বিগুণ ভাড়া ছাড়া, কোলকাতার সব ট্যাক্সি-অটো মিটারে চলে দরাদরি ছাড়াই।


৬। ঢাকার কাউকে কোন ঠিকানা বা রাস্তার কথা জিজ্ঞেস করলে সাধারণত বিস্তারিত বলে দেয় কিংবা এগিয়েও দেয় কখনো, কোলকাতায় কেবল “আগে দেখুন” বলেই শেষ, যা খুঁজতে খুঁজতে দফারফা।
৭। ঢাকার দোকানরা, হোটেল বয়রা সাধারণত হেসে কথা বলে, স্যার স্যার সম্বোধন করে কিন্তু কোলকাতার ঐসব মানুষেরা মুখ কালো করে কথা তেমন বলতেই চায়না।
৮। ঢাকার মোবাইল সিম বেশ সহজলভ্য দোকানি বিক্রির জন্য উদগ্রীব, কোলকাতার সিম খুব দুর্লভ, দোকানি বা/বাঙালির কাছে বিক্রিতে বেশ অনাগ্রহি।
৯। ঢাকার মানুষেরা মাছ/মাংস/মিস্টি কমপক্ষে ১-কিলো ছাড়া কেনে না, কোলকাতার মানুষেরা ২-৩টা মাছ বা মিস্টি কেনে প্রয়োজন মতো।
১০। ঢাকার মানুষেরা অতিথিকে বাড়িতে নিতে + ভাত না খাইয়ে ছাড়তে চায় না। কোলকাতার মানুষেরা (২/১টি ব্যতিক্রম ছাড়া) রাস্তায় ৫-টাকার ভাড়ের চা খাইয়ে অতিথি বিদায় দেয়।
১১। ১-২ টাকা মনে হয় ঢাকার মানুষের কাছে তুচ্ছতর, তাই ব্যাংকে বা অন্যত্র সাধারণত ১-২ টাকা কম দেয়া হয় প্রায় সবাইকে, কিন্তু কোলকাতার ১-টাকা্ও কারো থেকে কম নেয়া হয়না বা প্রাপককে দেয়া হয় হিসেব মতই।
১২। বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের ট্রেন ও বাস ভাড়া অনেক সস্তা যদিও তেলের দাম প্রায় সমান। তা ছাড়া বাংলাদেশের ৯০% গাড়ি চলে গ্যাসে। পশ্চিম বাংলায় লঞ্চে গঙ্গা পার হতে ৪/- টাকা লাগে, বাংলাদেশের পদ্মা (eg Mawa Ghat) পারে ভাড়া ৩৫/- টাকা।
১৩। বাংলাদেশের স্কুলগুলোতে ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক পশ্চিম বাংলার স্কুলে ধর্ম শিক্ষা নেই, কেবল মাদ্রাসা আর মিশনারী স্কুলে আরবি ভাষা ও বাইবেল শেখানো হয়। সাধারণ স্কুলে ধর্ম নেই।
১৪। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মান্ধ পশ্চিম বাংলার অধিকাংশ মানুষ ধর্মমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক। তাই ধর্মের সমালোচনাকারীকে বাংলাদেশে হত্যা করা হয়, কোলকাতায় ধর্মের সমালোচনাকারীর ব্যাপারে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।
১৫। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলিম (৮৯%), প্রায় ৯% হিন্দু, পশ্চিম বাংলায় ৭২.৫% হিন্দু আর ২৫.২% মুসলিম।
আরো অনেক কথা লেখা যায় কিন্তু এ পর্যন্তই রইলো। আপনারা কেউ কি জানেন একই নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্টের কিন্তু রাজনৈতিক আর ধর্মীয় বিভাজিত একটি জাতি কেবল ২ রাষ্ট্রে বসবাসের কারণে কেন ২০১৫ সনে এতো প্রভেদ সৃষ্টি হলো?



লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন