মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ভাষাবিদ পাণিনি : জীবন, গবেষণা ও মৃত্যু বিষয়ক কথামালা ৪ পর্বের লেখার পর্ব # ৪ ভারত রিলেটেড প্রবন্ধ # ৩১




এবার যাঁরা পাণিনিকে অনুসরণ করতেন তাঁদের মনে হলো কাত্যায়ন, পাণিনির ওপর সুবিচার করেন নি, উপরন্তু তাঁকে বিকৃত করেছেন।অনেকেই চেস্টা করেছিলেন এই বিকৃতি থেকে পাণিনিকে বাঁচাবার, কিন্তু সফল হন নি। প্রথম যিনি সফল হয়েছিলেন, তিনি পতঞ্জলি। তাই পতঞ্জলি এখানে প্রাসঙ্গিক। পতঞ্জলি যে ৪ টি বই লেখেন, সেগুলো হলো ১) যোগদর্শন(এটি ভারতীয় ষড়দর্শনের অন্যতম; সাংখ্য, বেদান্ত, যোগ, বৈশষিক, ন্যায় এবং মীমাংসা)।২) মহাভাষ্য, এগুলি তিনি লিখেছিলেন চিত্তশুদ্ধির জন্য।৩) আয়ুর্বেদ, দেহশুদ্ধির জন্য।৪) ব্যাকরণ, বাক্ শুদ্ধির জন্য।(এই ৪ পতঞ্জলি ১ ই ব্যক্তি কিনা; তাই নিয়ে মতভেদ আছে, তবে সেটা প্রসঙ্গান্তরে আলোচনা করা যাবে সময় এবং সুবিধা মত।) 
:
পতঞ্জলির মহাভাষ্য প্রন্থটি গ্রীক পণ্ডিত প্লেটোর মত সংলাপের ভঙ্গিতে লেখা। তাঁর গ্রন্থে পাণিনির কিছু সূত্রকে বিকল্পভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর বর্ণনা দেখলে মনে হয় পাণিনির বিরুদ্ধবাদীদের নিরস্ত করার জন্যই তিনি এই কাজ করেছিলেন। পাণিনির সমালোচনা করে বার্ত্তিককার কাত্যায়ন যা লিখেছিলেন এবং কাত্যায়নকে সমালোচনা করে পতঞ্জলি যা লিখেছিলেন সবগুলোই শেষ পর্য্যন্ত পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণেরই অঙ্গ হয়ে উঠল। সেই জন্য পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণকে ত্রিমুনি ব্যাকরণ বলা হয়। এই ৩ জনের সম্মিলিত অবদানের জন্য সাধারণভাবে এই ব্যাকরণকে পাণিনি ব্যাকরণ, পাণিনি তন্ত্র বা পাণিনিনয় নামে বলা হয়ে থাকে। 
:
পাণিনি হাজারো ভাষাতাত্ত্বিক সূত্র বানাতে গিয়ে দিনরাত শ্রম দিয়েছেন অক্লান্ত। যা তার শ্রমঘন ব্যাকরণিক সূত্র প্রমাণ দেবে। সবশেষে হিস্র বাঘ প্রচণ্ড দৌড়ানোর সময় যে শব্দ করে তা স্বরতন্ত্রীর কোন স্থান থেকে সৃষ্টি হয় এবং তখন বাঘের গলনালিতে বাতাসের অবস্থা তথা স্বরযন্ত্রের অবস্থা সরাসরি পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন পাণিনি। বনে গিয়ে বাঘ পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন পাণিনি। একদিন সত্যিই এমন সুযোগ হয় পাণিনির। তিনি বাঘের শব্দ সৃষ্টি পর্যবেক্ষণে এমনই নিমগ্ন হন যে, বাঘটি যে তাকেই আক্রমণ করতে আ্সছে তাও তিনি অনুধাবনে ব্যর্থ হন। অবশেষে বৃদ্ধ বয়সে বাঘটি সরাসরি তাকে আক্রমণ করে সহজেই হত্যা করে বিশ্বের এক জ্ঞানতাপস ভাষাবিদকে। 
:
বলা হয় ভাষার জন্যেই বেঁচে ছিলেন পাণিনি, ভাষার জন্যেই জীবন দিয়েছেন তিনি। বাঙলাভাষাসহ ভারতীয় কমপক্ষে ১৫টি ভাষার ব্যাকরণ মূলত পাণিনির রচিত ব্যাকরণ। বাঙালিরা অদ্যাবধি বাঙলা ভাষার কোন নিজস্ব ব্যাকরণ রচনাতে ব্যর্থ হয়ে, পাণিনির ব্যাকরণকে মুলত এখনো অনুসরণ করছে বাঙলা ব্যাকরণ হিসেবে। ভাষার জন্যে জীবন উৎসর্গকারী মহান এ জ্ঞানতাপসের জন্যে বিনম্র শ্রদ্ধা ! 
:
[৪ পর্ব লেখাটি সমাপ্ত। লেখাটি লিখতে নেট, বিভিন্ন পুস্তকাদি ও ব্যাকরণ বই থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে]



লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন