মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

৭১’র মুক্তিযুদ্ধের স্বরূপ সন্ধান : ইন্দিরাগান্ধী, ভারতরাষ্ট্র আর সোভিয়েত সহযোগিতার অকথিত কথামালা পর্ব # ৭ [ বাংলাদেশ ভারত রিলেটেড প্রবন্ধ # ২২ ]



মুক্তিবাহিনির যুদ্ধকৌশলে পাকিস্তানি বাহিনিকে পরাজিত করতে তিন ধাপের সামরিক লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছিল। ধাপ তিনটি যথাক্রমে মুক্তিবাহিনির গেরিলাদের দ্বারা গেরিলা অভিযান, মুক্তিবাহিনির নিয়মিত সদস্য ও গেরিলাদের সমন্বয়ে অভিযান এবং প্রচলিত কায়দায় সর্বাত্মক আক্রমণ। নভেম্বর নাগাদ মুক্তিবাহিনি তাদের যুদ্ধকৌশলের দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছায়। তারা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটায়। তবে তৃতীয় ধাপে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার আগেই ভারতিয় সশস্ত্র বাহিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
:
২১ নভেম্বর ভারতিয় ও পাকিস্তানি বাহিনির মধ্যে যশোরের বয়রার কাছে বিচ্ছিন্ন লড়াই হয়। ৩০ নভেম্বর ভারতিয় সংসদে ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সেনা প্রত্যাহার না করা হলে সীমান্ত এলাকা থেকে ভারত সেনা সরিয়ে নেবে না। তখন পাকিস্তান তার শেষ অস্ত্র হিসেবে ৩ ডিসেম্বর ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। উদ্দেশ্য, এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক দরবারে নিয়ে গিয়ে ভারতকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা। কিন্তু আন্তর্জাতিক মতামত গঠনে ভারত সফল হওয়ায়, বিশেষত জাতিসংঘে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন থাকায়, ভারতিয় বাহিনি মুক্তিবাহিনির সহায়তায় অত্যন্ত দ্রুত বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। পাকিস্তানের যুদ্ধের পরিকল্পনা পুরোপুরি ভেস্তে যায়। এককভাবে মুক্তিবাহিনি পাকিস্তানি বাহিনিকে হারানো পর্যন্ত অপেক্ষায় না থেকে ভারতিয় বাহিনি দ্রুতবেগে ঢাকার দিকে যাত্রা করে। পাকিস্তানের যুদ্ধ ঘোষণা অবশ্য তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ তৈরি করে দেয়।
:
পাক-ভারত যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভারতের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনি ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনিকে আত্মসমর্পণ করার জন্য ‘চূড়ান্ত বিবৃতি’ পাঠায়। পাকিস্তানি সেনারা ১৬ ডিসেম্বর এই যৌথ বাহিনির কাছে আত্মসমর্পণ করে, যদিও সেখানে বাংলাদেশের সামরিক প্রধান জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ভারত একদিকে একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে, অন্যদিকে এ অঞ্চলে তার স্বার্থ সংহত করতেও সক্ষম হয়।



লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন