বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৫

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প (Rivers Interlinking Project of India) পর্ব : ১ [ ৪৮ ]

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প (Rivers Interlinking Project of India)
ইতিবাচকতা ভার্সাস নেতিবাচকতা
==========================
=======================

২ পর্বের বড় লেখার প্রথম পর্ব
প্রাক-কথন :
========
ভারতীয় উপদেশের সবচেয়ে জলবেষ্টিত সর্পীল বিণুনী প্রকৃতির দেশ সম্ভবত রাজনৈতিক বাংলাদেশ। এদেশের মানুষের জীবন মূলত জলকেন্দ্রিক। জলের সাথে যুদ্ধ আর প্রেম করেই টিকে থাকে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ। জলযুদ্ধও প্রাচিন কাল থেকেই মানুষের মৌলিক প্রপঞ্চের এক অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত এ অঞ্চলে। এ নিয়ে রাজনীতিও কম হয়নি বিশ্বে আর এ উপমহাদেশে। এসব বিস্তারিত আলোচনার আগে নজর দেই এ ভূভাগের মাটি আর মানুষের জীবন কথনে।
:
এ অঞ্চলের সিন্ধু সভ্যতার অন্তিম হরপ্পা পর্যায়ে (১৯০০-১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) হরপ্পাবাসিরা সিন্ধু উপত্যকা ছেড়ে পূর্বদিকে বসতি স্থাপন করতে করতে গঙ্গা-যমুনা দোয়াব পর্যন্ত চলে আসে বলে মনে করা হয়। যদিও কেউই গঙ্গা পার হয়ে পূর্বতীরে বসতি স্থাপন করেনি। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের গোড়ার দিকে হরপ্পা সভ্যতার ভেঙে যাওয়ার সময় থেকে ভারতীয় সভ্যতার প্রাণকেন্দ্রটি সিন্ধু উপত্যকা থেকে সরে চলে আসে গাঙ্গেয় অববাহিকায়। গাঙ্গেয় অববাহিকায় অন্তিম হরপ্পা বসতিতে পুরাতাত্ত্বিক সংস্কৃতি, ইন্দো-আর্য জাতি ও বৈদিক যুগের মধ্যে কোনো সংযোগ থাকলেও থাকতে পারে বলে নৃতাত্ত্বিকগণ মনে করেন। আদি বৈদিক যুগ বা ঋগ্বেদের যুগে গঙ্গা নয়, সিন্ধু ও সরস্বতী নদীই ছিল পবিত্র নদী কিন্তু পরবর্তী তিন বেদে গঙ্গার উপরের অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তারপর মৌর্য থেকে মুঘল সাম্রাজ্য পর্যন্ত অধিকাংশ ভারতীয় সভ্যতারই প্রাণকেন্দ্র ছিল গাঙ্গেয় সমভূমি। 
:
ভূতাত্ত্বিকভাবে ভারতীয় উপমহাদেশ ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাতের উপর ভারতীয় পাত নামে একটি ছোট পাতের উপর অবস্থিত। এর গঠনপ্রক্রিয়া ৭৫-কোটি বছর আগে দক্ষিণের বড় মহাদেশ গণ্ডোয়ানার উত্তরমুখে অভিসরণের সময় শুরু হয়। এই গঠনপ্রক্রিয়া চলে ৫০-কোটি বছর ধরে। এরপর উপমহাদেশের পাতটি ইউরেশীয় পাতের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এর ফলে জন্ম হয় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয়ের। উত্থানশীল হিমালয়ের ঠিক দক্ষিণে পূর্বতন সমুদ্রতলে পাত সঞ্চারণের ফলে একটি বিরাট চ্যূতির সৃষ্টি হয়। এই চ্যূতিটি সিন্ধু নদ ও তার উপনদীগুলি এবং গঙ্গার আনীত পলিতে ভরাট হয়ে বর্তমান সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমির জন্ম দিয়েছে। সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি ভূতাত্ত্বিক পরিভাষায় একটি অগ্রভূমি অববাহিকা।
:
গঙ্গা কেবল পবিত্র নদীই নয়, গঙ্গা বিশ্বের পাঁচটি সবচেয়ে দূষিত নদীর একটি। বারাণসীর কাছে এই নদীতে ফেসাল কলিফর্মের পরিমাণ ভারত সরকার নির্ধারিত সীমার চেয়ে একশো গুণ বেশি। গঙ্গাদূষণ শুধুমাত্র গঙ্গাতীরে বসবাসকারী কয়েক কোটি ভারতীয়েরই ক্ষতি করছে না, করছে ১৪০টি মাছের প্রজাতি, ৯০টি উভচর প্রাণীর প্রজাতি ও ভারতের জাতীয় জলচর প্রাণী গাঙ্গেয় শুশুকেরও। গঙ্গাদূষণ রোধে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান নামে একটি পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু দূর্নীতি, প্রযুক্তিগত অদক্ষতা, সুষ্ঠু পরিবেশ পরিকল্পনার অভাব, ভারতীয় ধর্মীয় ঐতিহ্য ও বিশ্বাস এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলির অসহযোগিতার কারণে এই প্রকল্প ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
:
বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০৫টি নদনদী সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ (Environment) ও প্রতিবেশ (Ecology) সম্পূর্ণভাবে এসকল নদনদীর স্বাভাবিক প্রবাহের উপর নির্ভরশীল। চাষাবাদের জন্য সেচের পানি যোগান, কৃষিভূমিতে নতুন পলি সরবরাহ, অগণিত প্রজাতির মাছের উৎস, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ঠিক রাখা, বাণিজ্যিক পরিবহন পথ, সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষায় নদনদীগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবীকা ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রত ভাবে জগিয়ে আছে এ দেশের নদনদী। গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং সুরমা-মেঘনা বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীব্যবস্থা ((River Systems) । অসংখ্য উপনদী, শাখানদীসহ গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং সুরমা-মেঘনা নদীব্যবস্থার সম্মিলিত নদী অববাহিকার (River catchment) আয়তন ১৭,২০,০০০ বর্গ কিলোমিটারেরও অধিক। এই বিশাল নদী অববাহিকার মাত্র সাত ভাগের কিছু বেশি এলাকা বাংলাদেশের অন্তর্গত। অবশিষ্টাংশ ভারত, নেপাল, ভূটান এবং চীনে অবস্থিত। অর্থাৎ ৯০ ভাগের বেশি পানি প্রবাহের উপর বাংলাদেশের সরাসরি কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ সব সপ্তপদি কর্মকান্ড মাথায় রেখে ভারত সরকার মাথায় নিল আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের। দেখা কি সে প্রকল্প !
:

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প(Rivers Interlinking Project of India)
=================================================

আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের দু’টি প্রধান দিক রয়েছে - যার একটি বলা হয়, “পেনিনসুলা” অংশ এবং অন্যটিকে বলা হয় “হিমালয়ান” অংশ। প্রথম অংশে থাকবে দক্ষিণ ভারতের মহানদি, গোদাভারী, পেন্নার, কৃষ্ণা, কাবেরি ইত্যাদি নদীর মধ্যে সংযোগ সাধনের জন্য ১৬-টি কৃত্রিম খাল তৈরি। আর দ্বিতীয় দিকে - উত্তর হিমালয় নদী উন্নয়ন কার্যক্রম বা (Northern Himalayan River Development Component)-এ থাকবে মূলত গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদী এবং এগুলোর শাখা নদীতে পানি সংরক্ষণের জন্য কৃত্রিম সংরক্ষণাগার তৈরি। এখানে অধিক প্রবাহের সময় পানি ধরে রেখে, শুষ্ক সময়ে সে পানি ব্যবহার করা। এ জন্যে থাকবে ১৪টি কৃত্রিম সংযোগ খাল। ৩০টি সংযোগ খালের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১০-হাজার কিলোমিটার। এরূপ বিশালত্বের কারণে ভারতীয় গণমাধ্যমে একে ‘mother of all projects’ নামেও অভিহিত করা হয়। অনেক গবেষক একে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রকল্প হিসেবেও অভিহিত করেছেন। বলা হচ্ছে, কেবল প্রকল্পের নির্মান অংশের জন্যই প্রায় দেড় শ’ থেকে দু’ শ’ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। ভারতীয় মিডিয়ায় এই প্রকল্পের জন্য ব্যয়ের যে হিসাব সচরাচর উল্লিখিত হয়েছে তা হলো, ৫,৬০,০০০ কোটি ভারতীয় রূপি। এ প্রকল্পের আওতায় গঙ্গা ও ব্রক্ষপুত্র অববাহিকায় নদীতে বাঁধ দিয়ে ব্যাপক ভিত্তিতে জলাধার তৈরি করা হবে। পাশাপাশি প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটারের মতো খাল খনন করে পূর্ব ভারতের নদীগুলো থেকে জল অপসারণ করে পশ্চিম ভারতের নদীগুলোতে সরাবরাহ করা হবে। এর মাধ্যমে পশ্চিম ভারত ও আশেপাশের রাজ্যগুলোতে জলসংকট দুর হবে বলে ধারণা করছেন ভারতীয় প্লানারগণ।
:
উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদীসমূহ সংযুক্তকরার মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং শুষ্ক মরুময় অঞ্চলগুলোতে পানি সরবরাহ করার একটি মেগা-ইঞ্জিনিয়ারিং উচ্চাভিলাষি ভারতীয় প্রকল্প। এই প্রকল্পের তিনটি অংশ, যথাঃ ১. উত্তরের হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীসমূহের আন্তঃসংযোগ প্রকল্প, ২. দক্ষিণ ভারতের নদীসমূহের আন্তঃসংযোগ প্রকল্প, এবং ৩. আন্তঃপ্রদেশ নদীসমূহ সংযুক্তকরণ প্রকল্প।
প্রকল্পের হিমালয়ান অংশে হিমালয় থেকে উৎপন্ন গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং তাদের প্রধান প্রধান উপনদীগুলোর পানি ১৪টি লিংক খালের মাধ্যমে সংযুক্ত ও সংগ্রহ করে অসংখ্য বৃহৎ জলাধারে সংরক্ষণ করা হবে এবং উদ্বৃত্ত পানি খালের মাধ্যমে পানি ঘাটতি বা খরাপ্রবণ অংশে নিয়ে যাওয়া হবে। হিমালয়ান নদীসংযোগ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে ভারত এই অঞ্চলের অতিরিক্ত ২২মিলিয়ন হেক্টর জমিতে চাষাবাদ, ৩০মিলিয়ন কিলোওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীদুটির প্রবাহের উপর একাধিক ড্যাম নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।মানচিত্র-৩ঃ ভারতের আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প( হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীসমূহ সংযুক্তকরণ প্রকল্প)
:
ভারতে আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হলো ‘ন্যাশনাল ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’ (এনডব্লিউডিএ)। এই সংস্থার মতে ভারত তিনটি বিবেচনা থেকে এই প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে :-
:
ক. ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১৭০-কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা যোগানের লক্ষ্যে বাড়তি জমিকে সেচের আওতায় আনা; 

খ. গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বাৎসরিক বন্যার হাত থেকে আসাম, পশ্চিমবাংলা, বিহার ও উত্তরপ্রদেশকে রক্ষা করা; এবং 

গ. রাজস্থান, গুজরাট প্রভৃতি প্রদেশের খরা ও মরুপ্রবণ এলাকার সবুজায়ন।
:
ভারতের আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প অনুসারে, ভারতের উত্তর–পূর্বদিকের হিমালয় অঞ্চলের বিভিন্ন নদীর “বাড়তি” পানি বিভিন্ন সংযোগ খালের মাধ্যমে ভারতের দক্ষিণের শুষ্ক এলাকার নদীগুলোতে সরবরাহ করে সেচ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হবে। ভৌগলিক ভাবে এই প্রকল্পকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে– হিমালয় অঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চল বা পেনিনসুলার অঞ্চল। হিমালয় অঞ্চল থেকে মোট ৬ হাজার ১০০ কিমি দৈর্ঘ্যের ১৪টি খাল ও ১৬টি জলাধার ব্যবহার করে ১৪১.৩ বিলিয়ন কিউবিক মিটার(বিসিএম) পানি দক্ষিণের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে এবং দক্ষিণের বিভিন্ন নদীর মধ্যে ৪,৭৭৭ কি,মি দৈর্ঘ্যের আরো ১৬টি খাল ও ৫৮টি জলাধার ব্যাবহার করে ৩৩ বিসিএম পানি সংগ্রহের মাধ্যমে হিমালয় ও দক্ষিণাঞ্চল মিলিয়ে মোট ১৭৪.৩ বিসিএম পরিমাণ পানি স্থানান্তর করা হবে। আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ভারতের হিমালয় অঞ্চল থেকে ভারতের দক্ষিণে স্থানান্তরের জন্য নির্ধারিত মোট ১৪১.৩ বিলিয়ন কিউবিক মিটার(বিসিএম) পানির মধ্যে ৪৩ বিসিএম পানি নিয়ে যাওয়া হবে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা থেকে যে নদীটি শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের ৮০% পানির উৎস। এ কাজে ব্যাবহার করা হবে মানস–সংকোশ–তিস্তা–গঙ্গা সংযোগ খাল যার একটি বিকল্প হলো ব্রহ্মপুত্রের জোগিঘোপা–সংকোশ–তিস্তা–গঙ্গা সংযোগ খাল। এই সংযোগ খাল গঙ্গার ফারক্কা ব্যারেজের ৬০ কি.মি উজানে গঙ্গার সাথে মিলিত হবে যা থেকে ১৫ বিসিএম পানি ফারক্কা ব্যারেজের দিকে প্রবাহিত করে বাকি পানি বিভিন্ন সংযোগ খালের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে সরবরাহ করা হবে। পানি স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটি নিম্নোক্ত উপায়ে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করেছে ভারত:
:
১. ব্রহ্মপুত্র নদের উপনদী মানস নদীর উপর ভারত–ভুটান সীমান্তের প্রায় ৫ কি.মি উজানে ৮৭৫০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার(এমসিএম) পানি ধারণক্ষম জলাধার সহ একটি ড্যাম নির্মাণ।
:
২. ভুটানে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র নদের আরেকটি উপনদী সংকোশ নদীর উপর ভারত–ভূটান সীমান্তের ১২ কিমি উজানে ২৫৩ মি উচ্চতার ৪৯৩০ এমসিএম ধারণ ক্ষমতার জলাধার সহ আরেকটি ড্যাম নির্মাণ। এবং সংকোশ ড্যামের ১১ কিমি ভাটিতে সংকোশ ব্যারেজ নির্মাণ।
:
৩. পানি ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা থেকে গঙ্গায় নেয়ার জন্য মোট ৪৫৭ কিমি দীর্ঘ, ১০ মিটার গভীরতা ও ১:২০০০০ ঢাল সম্পন্ন মানস–সংকোশ–তিস্তা–গঙ্গা সংযোগ খাল (লিংক–১০) নির্মাণ করা। এই প্রক্রিয়ায় পানি মানস ও সাংকোশ নদী থেকে ব্রহ্মপুত্রে পৌছানোর আগেই তিস্তা হয়ে গঙ্গায় পাঠিয়ে দেয়া হবে।
:
বিজ্ঞানসম্মত উপাত্তের অভাবে তাত্ত্বিক সমর্থন না থাকা সত্ত্বেও, এই প্রকল্প ধারণাটি বিশেষ বেগবান হয় ১৯৯৯ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে এনডিএ জোট দেশটির কেন্দ্রে ক্ষমতা গ্রহণের পর। রাজস্থান, গুজরাট, অন্ধ্র প্রদেশ, কর্নাটক ও তামিলনাড়ুর মতো হিন্দু প্রধান ও খরা প্রবণ এলাকাগুলোতে ভোট পাওয়ার জন্য বিজেপি এই প্রকল্পকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের জন্য তারা যে টাস্কফোর্স গঠন করে খুব সচেতনভাবে তার প্রধান করা হয় শিবসেনা নেতা সুরেশ প্রভুকে। River-Politics নামে পরিচিত তথা ভারতে বহুল আলোচিত আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের কার্যক্রমে নাটকীয় অগ্রগতি ঘটেছে ২০১৫ সনে। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সম্প্রতি। যার প্রথম ধাপ হিসেবে কেন (Ken) ও বেতোয়া (Betwa) নদীর মাঝে সংযোগকারী কৃত্রিম খাল তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে শিগগির। উল্লেখ্য, মধ্য প্রদেশ ও উত্তর প্রদেশ জুড়ে প্রবাহিত কেন ও বেতোয়া নদী উভয়েই যমুনায় মিশেছে, আর যমুনা আবার মিশেছে গঙ্গা তথা পদ্মায়। 
:
পুরোপুরি কংক্রীটে তৈরি কেন-বেতোয়া নদী সংযোগ খালটি হবে প্রস্তাবিত আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের ৩০টি পরিকল্পিত খালের প্রথমটি - যার দৈর্ঘ্য ৩২৩.৪৫ কিলোমিটার। তবে এই নির্মাণ উদ্যোগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো মধ্যপ্রদেশের সাত্তারপুর-পান্না জেলার সীমান্তে প্রকল্পের মধ্যে ৭৩.৮০ মিটার উচু একটি ড্যাম [‘দাউদান’ (Daudhan) নামে পরিচিত] গড়ে তোলা হবে। যার দু’ স্থানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের দুটি কেন্দ্র থাকবে। কেন-বেতোয়া সংযোগ খাল থেকে ভারত মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশের ৪.৯৭ লাখ হেক্টর জমিকে নতুন করে সেচের আওতায় আনবে বলে পরিকল্পনা করছে। যেসব জেলায় সংযোগ খাল থেকে সেচের পানি যাবে তার মধ্যে রয়েছে - মধ্যপ্রদেশের সাত্তারপুর, টিক্কাগড়, পান্না, রাচি, বিদিশা এবং উত্তর প্রদেশের ঝাশি ও হামিরপুর। সেচ ছাড়াও বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা থাকায় কেন-বেতোয়া প্রকল্প বিশেষজ্ঞ পরিমন্ডলে ‘সেচসহ বিদ্যুত প্রকল্প’ হিসেবেই পরিচিত এখন।
:
ভারতের কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলোর মধ্যে পাঞ্জাব অন্যতম। এরই মধ্যে রাজ্যটির ভূ-উপরিভাগে জলের রিজার্ভ শেষ হয়ে এসেছে। সবচেয়ে আশংকার বিষয় হচ্ছে রাজ্যটির ৮০ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ জলের স্তর প্রতিবছর এক মিটার করে নীচে নেমে যাচ্ছে। আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় সব মিলিয়ে ৩০টি সংযোগ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে যার মধ্যে ১৬টি পড়েছে দ্বিপাঞ্চলে আর ১৪টি পড়েছে হিমালয় উপত্যকায়। এর মাধ্যমে ১৭০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার জল সঞ্চালন করা হবে। এছাড়াও আরো বেশ কিছু সংযোগ প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে যেগুলো রাজ্যগুলোর নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। সম্প্রতি বাংলা সফরকালে “হিমালয় অঞ্চলের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে না নেওয়ার” বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। যা ধন্যবাদযোগ্য মনে করি একজন বাঙলাদেশি হিসেবে।
:
[প্রবন্ধটি লিখতে সহায়তা নেয়া হয়েছে উইকি, বিবিসি, নেট, ভারত ও বাংলাদেশের বিবিধ পত্রিকা থেকে]


ফেসবুক লিংক দেখুন :



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন