বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৫

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প (Rivers Interlinking Project of India) পর্ব : ২ [ ৪৯ ]



ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প (Rivers Interlinking Project of India)
=================================================
২ পর্বের বড় লেখার শেষ পর্ব (Part # 2)
============================
 
[প্রথম পর্বের লিংক : https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1712941655606650&set=a.1381466915420794.1073741828.100006724954459&type=3&theater]
================================================
 
প্রকল্পের ঋণাত্মক-ধনাত্মক দিক : বিশেষজ্ঞ আর সমালোচনগণ যা বলেন
================================================
ভারতের বর্তমান সরকার প্রকল্পটি জোরেশোরে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। এরই মধ্যে জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে, যার সভাপতি সাবেক সচিব বিএন নাভালাওলা। এ প্রকল্পের পরিবেশগত এবং প্রতিবেশগত প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভারতের বুদ্ধিজীবিমহল এবং পরিবেশকর্মীরা ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। প্রথমত: তারা প্রশ্ন তুলেছেন যে, এই বিশাল প্রকল্পের ইতিবাচক দিকসমূহ এবং পরিবেশগত ঝুঁকিসমূহ যথাযথ নীরিক্ষা করা হয়নি। দ্বিতীয়ত তারা দাবি করছেন যে, এই প্রকল্পের ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, লবণাক্ততার বৃদ্ধি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এলাকাসমূহ মরুকরণের শিকার হবে।
: 
কেন-বেতোয়া প্রকল্প নিয়ে মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশের মধ্যে রয়েছে বিবাদ। বিবাদের অনেকগুলো দিক রয়েছে: প্রথমত. কেন অববাহিকার প্রায় ৮৭ ভাগ পড়েছে মধ্যপ্রদেশে - ফলে এখান থেকে পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনায় তারা উদ্বিগ্ন। দ্বিতীয়ত, যে সংযোগ খালের মাধ্যমে এই পানি বেতোয়া অববাহিকায় নিয়ে যাওয়া হবে, তার ৩২৩ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ১৮ কিলোমিটার পড়েছে উত্তর প্রদেশে। অর্থাৎ খালের জন্য যেসব জমি নষ্ট হবে, তার প্রায় পুরোটাই যাবে মধ্যপ্রদেশের। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ২১৩৫ হেক্টর যাবে মধ্যপ্রদেশ থেকে এবং মাত্র ১৮০ হেক্টর যাবে উত্তর প্রদেশ থেকে। ফলে উচ্ছেদ হওয়া গ্রামবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগকে পুনর্বাসন করতে হবে মধ্যপ্রদেশে। 
:
প্রত্যক্ষ স্বার্থগত ওই বিবাদের পাশাপাশি প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়েও বহু ভারতীয় সন্দিগ্ধ। এরূপ সন্দেহের অন্যতম বিষয় উদ্ধৃতপানির ধারণা। ভারতের প্রভাবশালী সাময়িকী ফ্রন্টলাইন’-কে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে (৭-২০ এপ্রিল ২০১২) অল ইন্ডিয়া পিপলস্ সায়েন্স নেটওয়ার্কের সভাপতি ডি. রঘুনাথন বলেছেন, ‘উদ্ধৃত্ত কথাটি তৈরি হয় সাপ্লাই-ডিমান্ডের উপর ভিত্তি করে। গঙ্গা অববাহিকায় জলের বর্তমান ও ভবিষ্যত চাহিদা সম্পর্কে কোন নিরপেক্ষ স্টাডি ছাড়াই ধরে নেয়া হচ্ছে, সেখানে বেশি জল প্রবাহ আছে এবং তা সরিয়ে নেয়া যেতে পারে। এই অববাহিকায় যখন আরও অধিক চাহিদা তৈরি হবে, তখন এই মেগাপ্রকল্প কী কাজে লাগবে? সকল অববাহিকাতেই পানির চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। 
:
এ প্রকল্পের ফলে কী-কী লাভ হবে - সেটা নিয়ে ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা সপ্তপদি কথা বললেও, এর ফলে কী-কী সামাজিক ক্ষতি হবে ও সংকট তৈরি হবে, তার ওপর কোন সমীক্ষা চালানোর কথাও এখন আর কেউ বলছে না। পুরো আন্ত:নদী প্রকল্পের আওতাধীন কমবেশি প্রায় ১০-হাজার কিলোমিটার কৃত্রিম খাল তৈরি করতে গিয়ে যে পরিমাণ মানুষকে জোর করে বা ইচ্ছের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ করে বাস্তুহারা করতে হবে, তার ওপরও কোন সমীক্ষা হয়নি এখনো। গবেষকদের অনুমান, এতে প্রায় ৫০-৬০ লাখ মানুষকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হতে হবে। অধিকাংশই যারা কৃষক ও আদিবাসী তথা দলিত । যার প্রভাব দেখা যাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরই। এইরূপ উচ্ছেদের ফলে কেবল যে আর্থিক ক্ষতি হয় তা নয় - বিভিন্ন জনপদের বিপুল সাংস্কৃতিক ক্ষতিও ঘটে তাতে। বড় আকারে উচ্ছেদের মধ্যদিয়ে শত শত বছর জুড়ে গড়ে ওঠা একটি জনগোষ্ঠীর পুরো সাংস্কৃতিক ও গোষ্ঠীগত অবকাঠামো তাৎক্ষণিকভাবে ধূলিস্যাৎ হয়ে পড়ে। ভারতে গত ৫০-বছরে বিভিন্ন ড্যাম, বিদ্যুত কেন্দ্র ও মেগা নির্মাণ কাঠামোর কারণে এভাবে প্রায় প্রায় ৫ কোটি মানুষের জোরপূর্বক উচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে।
:
ভারতীয় পরিবেশ বিশেজ্ঞদের বড় উদ্বেগের কারণ হলো, পান্না জেলায় ভারতের যে টাইগার রিজার্ভ পার্করয়েছে, সেই বনভূমির বিরাট এলাকা প্রকল্পের কাজের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। সরকারিভাবেই স্বীকার করা হচ্ছে যে, ,৪০০ হেক্টর বনভূমি নষ্ট হবে এই প্রকল্পে। এছাড়া এই প্রকল্পের কৃত্রিম খালের জন্য বহু মানুষকে উচ্ছেদও হতে হবে। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ১০টি গ্রামের ৮,৫৫০ মানুষ উচ্ছেদ হওয়ার আশংকার কথা কথা বলা হয়েছে। এছাড়া পানি বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা সচরাচর এটাও বলে থাকেন যে, প্রত্যেক নদীর অববাহিকার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা সেই নদীর অববাহিকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। পানি বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীদের এসব বক্তব্য শুরু থেকে আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের নৈতিক ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, এ ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। এর ফলে সৃষ্টি হবে জলাবদ্ধতা, প্রচুর মানুষ বাস্তুহারা হবে তার নিজ এলাকা আর বসতি থেকে। পাশাপাশি নদীতে পলি প্রবাহ ও মৎস সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ডুবে যাবে অসংখ্য বন আর খোলা মাঠ। আরো একটা অভিযোগ আছ যে, এ প্রকল্প নিয়ে কোনো ধরনের প্রতিবেদনই জনসম্মুখে আনা হয়নি। কারণ হিমালয় উপত্যকার দেশগুলোতে আন্ত:সীমান্ত নদী একটি জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু। কেবলমাত্র কেন-বেতওয়া লিংক নিয়ে একটি পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা করা হয়েছে। এই লিংকের মাধ্যমে কেন নদীর অতিরিক্ত জল একটি সংযোগ খালের মাধ্যমে বেতওয়া বেসিনে সরাবরাহ করা হবে, যেটির অবস্থান উত্তর প্রদেশ ও মধ্য প্রদেশে।
:
এ নিয়ে মামলা হয় ভারতীয় উচ্চ আদালতে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রিয় সরকারকে একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আদেশ দেয়। একইসঙ্গে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে দেয়ার জন্য কেন্দ্রকে পরামর্শ দেয় যাতে করে প্রকল্পটি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ওই আদেশে বলা হয়েছিল, ‘কয়েকটি বাদে মোটামুটিভাবে প্রায় সবগুলো রাজ্যই এ প্রকল্পের পক্ষে রয়েছে।বিশেষজ্ঞ গোপাল কৃঞ্চা অনেক দিন থেকেই নদী সংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তার মতে, ওই সময় আদালতকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ভারতের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে সাতটি রাজ্যই এ প্রকল্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আদালতে এফিডেভিট দাখিল করেছে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য আসাম ও সিকিম এবং দক্ষিণের রাজ্য কেরালা প্রকল্পের বিরোধীতা করেছে। এই রাজ্যগুলোর দাবী, নিজেদের জলসম্পদের উপরে তাদের অধিকার সবচেয়ে বেশি। রাজস্থান, গুজরাট ও তামিল নাডুর মতো রাজ্যগুলো ব্যাপক জলসংকটে ভূগছে। এসব রাজ্যের আভ্যন্তরীণ জলসম্পদ এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। 
:
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ি নিজস্ব জলসম্পদের উপরে পূর্ণাঙ্গ আইনগত অধিকার রাজ্য সরকারের। অন্যদিকে যেসব নদী একাধিক রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, সে বিষয়ে আইনগত সিদ্ধান্তের অধিকার কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের। আদালতে জল ভাগাভাগি নিয়ে এক রাজ্যের বিরুদ্ধে আরেক রাজ্যের বিস্তর অভিযোগ জমা পড়ে আছে বছরের পর বছর। 
:
মহারাষ্ট্র ও গুজরাট নিজেদের মধ্যে পার-তাপি-নমর্দা লিংকের মাধ্যমে জল ভাগাভাগির ব্যাপারে পিছিয়ে গেছে। রাজ্য দুটির জনগণের বিরোধীতায় এটি আর সম্ভব হচ্ছে না। অথচ দুটি রাজ্যেই ক্ষমতায় রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এই লিংকের মাধ্যমে মহারাষ্ট্রের ওয়েষ্টার্ণ ঘাট থেকে জল অপসারণ করে গুজরাটের মরু অঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। এর জন্য খনন করতে হবে প্রায় চারশকিলোমিটার দীর্ঘ খাল ও সাতটি বড় জলাধার। দুপক্ষের মধ্যে এনিয়ে ২০১০ সালে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। কিন্তু এখন মহারাষ্ট্র এ প্রকল্পটি নিয়ে কোনোভাবেই এগুতে চাইছে না।
:
এ নদীসংযোগ পরিকল্পনা আবার গড়ে উঠেছে এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে যে, ভারতের কিছু অববাহিকায় উদ্বৃত্ত পানি রয়েছেএবং সেখান থেকে তা পানির অভাবগ্রস্ত অববাহিকায় নেয়া যেতে পারে। এইরূপ প্রকৌশলগত চিন্তার প্রথম উদ্যোক্তা ছিলেন ১৯৬৩-৬৪ সালে খ্যাতনামা সেচ ও বিদ্যুতমন্ত্রী ড. কানুরি লক্ষণ রাও। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পানির তীব্র সংকট ও মরুকরণের মুখে পানিকেন্দ্রীক ওই ভাবনা এবং ১৯৮২ পরবর্তী উদ্যোগসমূহ স্বাভাবিকভাবেই জনমানসে ব্যাপক সমর্থন পায়। এই ধারণার সমর্থকরা তখন থেকে বলছে, এটা বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের ৩৫ মিলিয়ন হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। ৩৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত নতুন করে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত করা যাবে এবং অনেক প্রদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণও সহজ হবে। অত্যধিক ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে প্রথম থেকে আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভাব্যতা নিয়ে অনেক সন্দেহ ছিল। এমনকি গঙ্গার শাখানদী হিসেবে মহানদি, গোদাভারী ইত্যাদিতে উদ্ধৃত্তপানি থাকার যে ধারণার ওপর ভিত্তি করে এই মেগা প্রকল্পের অভিযাত্রা - তার যথার্থতা সম্পর্কেও এখনো কোন পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ গবেষণা ও জরিপ হয়নি সেখানে। 
:
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে যে নদীগুলোর পানি বাড়তিহিসেবে অযথাই বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়ে অপচয়হচ্ছে, ভারতের গোটা হিমালয় অঞ্চলের জনগণ ও প্রকৃতির জন্য কিংবা গঙ্গাব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ভাটির দেশ বাংলাদেশের জনগণের জন্য তাই অপরিহার্য, কারণ নদী অববাহিকার জনগণ ও প্রকৃতির কাছে নদী কেবল কিউমেক/কিউসেকে পরিমাপ যোগ্য পানির আধার নয়, নদী একটি প্রবাহমান জীবন্ত সত্ত্বা যার সজলসজীববাঁধাহীন অস্তিত্বের উপরই নির্ভর করে গোটা অববাহিকার কৃষিমৎসবনাঞ্চলজলাভূমি সহ সমগ্র জীবন ও প্রকৃতির স্বাভাবিক সজীব অস্তিত্ব।
:
ভারত ছাড়াও এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জলতাত্ত্বিক (Hydrologic) মানচিত্র আমূল বদলে যাবে নিশ্চয়ই। পানি এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই পানি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে হিমালয় অঞ্চলে পৃথিবীর সর্বাধিক সংখ্যক বাঁধ নির্মিত হবে। এ সকল বাঁধের মাধ্যমে হিমালয় থেকে আগত নদীসমূহের পানি প্রত্যাহারের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের ভূমিরূপ, পরিবেশ, প্রতিবেশ, অর্থনীতি ইত্যাদির উপর সঙ্গত কারণেই প্রভাব পড়বে। গঙ্গা বিশ্বের অন্যতম একটি দূষিত নদী। নদীটির দূষণ রোধে যথেষ্ট জলপ্রবাহ থাকা উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নদীর জল উত্তর প্রদেশের কাণপুরে পৌছার আগেই এর ৯০ শতাংশ জল অপসারিত হয়ে যায় কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য। এর অর্থ হচ্ছে নদীটি এর সমগ্র গতিপথের এক তৃতিয়াংশ শেষ করার আগেই এর জল শেষ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে যদি গঙ্গার জল অন্যান্য নদীতে অপসারিত হয়ে চলে যায় সেক্ষেত্রে ক্লিন গঙ্গার স্বপ্ন অধুরাই রয়ে যাবে। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভারতীয় সমাজবাদি মনোজ মিশ্র। তিনি বলেন, ‘এটি আসলে একটি পরস্পরবিরোধী নীতি। একদিকে বলছে, গঙ্গাকে তারা নতুন করে প্রবাহমান করে তুলবেন, আবার অন্যদিকে আবার বলছেন নদী সংযোগের কথা। নদী তো আসলে কোনো পাইপ-লাইন নয় যে, তাকে সংযুক্ত করা যাবে। প্রকল্পটি নিয়ে বেশ আশাবাদী ভারতের কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী ঊমা ভারতী। সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে বেশ উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আন্ত:নদী সংযোগ (আইএলআর) প্রকল্প বাস্তবায়নের পক্ষে রয়েছে। তার মতে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশে নৌ চলাচলের ক্ষেত্রে উন্নতি হবে।
:
বাংলাদেশ ও ভারতে জল আর নদী একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। চাহিদা মেটাতে দেশ দুটোকে অনেকাংশে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপরে নির্ভরশীল থাকতে হয়। তাই যৌথ নদীর জল ভাগাভাগির ক্ষেত্রের রাজ্যগুলোর মধ্যে যেমন দ্বন্দ্ব লেগে থাকে ভারতে, তেমনি আছে রাজনৈতিক বাংলাদেশের সাথেও। বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের উচিত হবে, এ বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে পাশে রাখা, যাতে ভারত থেকে ৫৪-টি প্রবাহমান নদী যা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মূলত ভারত থেকে, তার প্রবাহে যেন বিঘ্ন না ঘটে। ইসিভুক্ত দেশগুলো যেমন ক্রমান্বয়ে তাদের সিমান্তরক্ষী, টাকার নোট, পাসপোর্ট ভিসা তুলে দিয়ে নিবিড় বন্ধুত্বে স্নাত হচ্ছে প্রতিবেশিরা, ভারতের সাথেও আমাদের এমন সম্পর্কের সুবাতাস বইবে, এ প্রত্যাশা করি বাংলাদেশের বাঙালি হিসেবে। 
:
তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং জনগণকে যৌক্তিকভাবে মনে রাখতে হবে, ভারত যে কাজ করবে তা অবশ্যই করবে তার নিজ দেশের স্বার্থে। নিজ স্বার্থে কোন কাজ করলেই সে দেশ খারাপ হয়ে যায়না। ভারত, মায়ানমার কিংবা চীন নিজ স্বার্থ বাদ দিয়ে বাংলাদেশের জন্যে কোন কাজ করে দেবে, এ প্রত্যাশা হাস্যকর বোদ্ধা মানুষের কাছে। তাই বাংলাদেশকে নিতে হবে এমন সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনা, যাতে ভারতের এ প্রকল্প থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরাও আমাদের নদীগুলোর সংযোগ করে শীত মৌসুমে পানির চাহিদা মেটাতে পারি। বর্ষা মৌসুমে সংরক্ষণ করতে পারি অতিরিক্ত পানি। এটা না করে ভারত রাষ্ট্র তার বিশাল জনগোষ্ঠীর মঙ্গলের কথা চিন্তা করে যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তার কেবল বিরোধিতা করে গেলে, ভারতের সাথে আমাদের কেবল ভুল বোঝাবুঝি বাড়বে। বরং বাস্তবভিত্তিক হবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে এ প্রকল্প থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা আর সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করা। 
:
[প্রবন্ধটি লিখতে সহায়তা নেয়া হয়েছে উইকি, বিবিসি, নেট, ভারত ও বাংলাদেশের বিবিধ পত্রিকা]

ফেসবুকে দেখতে চাইলে :
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন